লন্ডন, ২৮ ফেব্রুয়ারী : গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকে'র একটি প্রতিনিধি দল বৃটেনের বাংলাদেশের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার হ্যার এক্সেলেন্সি আবিদা ইসলাম এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে নো ভিসা ও পাসপোর্টের ফি কমানো এবং ওসমানী বিমান বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিকরন ও সিলেট প্রদেশ বাস্তবায়ন সহ প্রবাসীদের ১০ দফা দাবি দাওয়া সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪ ঘটিকায় লন্ডনস্থ দূতাবাস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া এবং বাংলাদেশে সহায় সম্পত্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও কমিউনিটির নানা ইস্যু তুলে ধরে হাইকমিশনারের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশের ব্যাংক একাউন্ট খোলা সরকারি যাবতীয় কার্যক্রমে প্রবাসীদের পাসপোর্ট যাতে আইডি হিসেবে ব্যবহার করা যায় তার জন্য লজিস্টিক সাপোর্ট গ্রহণের আহবান জানানো সহ হাই কমিশনের মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীরা যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
ওসমানী বিমান বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে রুপান্তরিতকরণসহ যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে বিমানের পাশাপাশি অন্যান্য এয়ার লাইনসের এয়ার ক্র্যাফট যাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অসম ভাড়া কমানোর জোর দাবি জানানো হয়। শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের মেধাবী ও দক্ষ ছাত্রছাত্রী এবং প্রফেশনালদের দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আইটি ও মেডিকেলসহ অন্যান্য সেক্টরে খণ্ডকালীন শিক্ষক ও কনসাল্টেন্সি পেশায় ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের উদ্বোদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানানো হয়। সম্প্রতি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাতে ডাকাতিসহ প্রবাসীদের বিভিন্ন ধরণের হয়রানী প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জোড়ালো ভূমিকার দাবি জানানো হয়।
পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময়কালে প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের কেন্দ্রীয় কো-কনভেনর মসুদ আহমদ, কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ড. মুজিবুর রহমান, গ্রেটার সিলেটের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় চেয়ারপার্সন নুরুল ইসলাম মাহবুব, কেন্দ্রীয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক ৭১ এর বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম কয়সর, সংগঠন এর সাউথ ইস্ট রিজিওনের কনভেনর হারুনুর রশিদ, কো-কনভেনর জামাল হোসেন, সদস্য সচিব মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, জয়েন্ট কনভেনর আব্দুর রহিম রঞ্জু, ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সায়েম করিম।
এদিকে গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের কেন্দ্রীয় কনভেনর সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর অসুস্থতার কারণে মতবিনিময়কালে উপস্থিত থাকতে না পারলে ও টেলিফোন কনফারেন্সে সার্বক্ষণিক বৈঠকের খোঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিধিদলের সবাইকে এবং বৃটেনের বাংলাদেশের হাই কমিশনার হ্যার এক্সেলেন্সি আবিদা ইসলামকে সময় দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রবাসীদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের অব্যাহত ক্যাম্পেইনে এবং কমিউনিটির উন্নয়ণে সংগঠন এর আগামী দিনের কর্মকাণ্ডে সবাইকে সহযোগিতা করার আহবান জানিয়েছেন।
এছাড়াও প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দ হাইকমিশনের কনস্যুলার সার্ভিস বেজমেন্টে থাকায় বয়োবৃদ্ধ ও ডিসেবলদের জন্য গমনাগমন কষ্টকর হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তারা বেজমেন্ট থেকে উপরের কোনো ফ্লোরে স্থানান্তর করার দাবি সহ নো ভিসা ও পাসপোর্টের ফি কমানো সহ এনআইডি কার্ড সার্ভিস সহজ করা এবং হাই কমিশনের কনস্যুলার সার্ভিসের সেবা বৃদ্ধিতে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। সিলেট প্রদেশ বাস্তবায়নের দাবিটির যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দ বলেন সিলেট বিভাগ নিয়ে জালালাবাদ প্রদেশ গঠনের দাবি অনেক পুরনো। তাই সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মতে বাংলাদেশকে কয়েকটি প্রদেশে ভাগ করতে হলে বৃহত্তর সিলেটের ৪ জেলা নিয়ে একটি প্রদেশ গঠন হবে যুক্তিযুক্ত।
দেশ ও প্রবাসের সিলেটবাসীদের পক্ষ থেকে আমাদের আবেদন সিলেট বিভাগকে আরেকটি প্রদেশ হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে ১৮৭৫ থেকে যে বঞ্চনা শুরু হয়েছিল তার সমাপ্তি ঘটানো। কারণ ১৮৭৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও "বেঙ্গল " প্রদেশ থেকে জোর করে সিলেট জেলাকে আসাম প্রদেশের সাথে যুক্ত করা. সিলেটের বাঙালীরা (হিন্দু মুসলিম সবাই) সংখ্যা লঘু কিন্তু শিক্ষিত হবার জন্য আসাম প্রদেশের আদিবাসীদের প্রচুর বৈষম্যের শিকার হতেন। ১৯৪৭ সিলেটবাসীরা ভোট দিয়ে ঐতিহাসিক রেফারেন্ডামের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা বা পাকিস্তানে যোগ দেন. সমস্ত পূর্ব পাকিস্তানে তখন সকল সামরিক, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক কর্ম কর্তার মাঝে সিলেটি আধিক্য ছিল সব চেয়ে বেশি। কিন্তু বহু দিন বেঙ্গল প্রদেশের বাইরে থাকায় এবং অপরিচিত আঞ্চলিক ভাষাগত ব্যবধানে ( যদিও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা আরো কঠিন) তখন তারা একটি বৈষম্যের শিকার হতে শুরু করেন। তার বহু প্রমান বিদ্যমান। সিলেটে তাই বহু বার আন্দোলন করে বহু শিক্ষা প্রতিষ্টান সহ সব অর্জন করতে হয়েছে বা কিছু অর্জন করা সম্ভব হয়নি । ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে সকল স্বাধীনতা সংগ্রাম ও সামাজিক উন্নয়নে সিলেটবাসিদের অবদান বিশাল। প্রাকৃতিক সম্পদ, পর্যটন, রেমিট্যান্স এ সব জেলা থেকে অগ্রগণ্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর প্রথম ছয় জন উর্ধতন কর্মকর্তা , বহু খেতাব প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, সিলেট মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের দেশের সব চেয়ে বেশি আত্মাহুতি , যুদ্ধকালীন এবং এখনো প্রবাসী সিলেটিদের বিশাল অবদান, বিনিযোগ , রেমিট্যান্স অব্যাহত রাখার প্রচেষ্টা সবই দৃশ্যমান। ব্রিটিশ আমল থেকেই এমন অসাম্প্রদায়িক উদাহরণ অন্য কোথাও দেখা যায়না। এছাড়াও গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের সাউথ ইষ্ট রিজিওন উদ্দ্যোগে আয়োজিত লন্ডনের ইফতার মাহফিলের দাওয়াতে হাইকমিশনার সহ কমিউনিটির সবার উপস্থিতি কামনা করা হয়েছে সংগঠন এর পক্ষ থেকে। গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের প্রেস এন্ড পাবলিক সিটি সেক্রেটারি শেখ নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan